হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর নাম হয়তো আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর ছেলে। পিতার মতো তিনিও ছিলেন ইসলামের একজন প্রসিদ্ধ সাহাবি।
একবার আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ঝগড়া বেধে যায়। তাঁরা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে থাকেন এবং একে অপরের দোষগুলো প্রকাশ করে দিতে থাকেন। একপর্যায়ে রাগের মাথায় আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঘর ছেড়ে বের হয়ে যান। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেবেন। এভাবে ঝগড়া করে একসঙ্গে থাকার চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
কোরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে গেল। আয়াতটি সুরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াত, ‘আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। আর যদি তাদের অপছন্দ করো, হতে পারে তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’
আয়াতটিতে আল্লাহ-তাআলা তাঁর বান্দাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপদেশ দিয়েছেন। মানুষের স্বভাব হলো শুধু নেতিবাচক জিনিসগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। অথচ আল্লাহ তাআলা সবার ভেতরই কিছু না কিছু ইতিবাচক দিক রেখেছেন। কেউ যখন নেতিবাচক দিকগুলোকে প্রাধান্য দেয়, তখন ইতিবাচক দিকগুলো ঢাকা পড়ে যায়, যেটা হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর ক্ষেত্রে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। অথচ তাঁর স্ত্রীর ভেতর ভালো কিছুও তো থাকতে পারে, যা তিনি এখন দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি তালাক দেওয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। পবিত্র কোরআনের এ আয়াত তাঁকে সবকিছু পুনরায় বিবেচনা করতে বাধ্য করে। বাসায় ফিরে গিয়ে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা করে ফেলেন এবং ঝগড়ার জন্য অনুতপ্ত হন।
কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রীর গর্ভে একটি ফুটফুটে সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানের নাম রাখা হয় সালেম। সালেমকে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) খুবই ভালোবাসতেন। তাঁকে তাঁর অন্য সন্তানদের চেয়ে প্রাধান্য দিতেন।
সালেম যখন ছোট, তখন হজরত আয়েশা (রা.) তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। সালেমকে দেখে তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। আয়শা (রা.) তাঁর এক বোনকে অনুরোধ করেছিলেন সালেমকে দুধ পান করাতে, যাতে সালেমের জন্য তিনি মাহরাম হয়ে যেতে পারেন। ফলে আয়েশা (রা.) লম্বা সময় সালেমের সঙ্গে কাটাতে পারবেন। সালেম নিজেও আয়েশা (রা.)-এর কাছে থেকে কোরআন ও হাদিসের বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। সালেম পরবর্তীকালে মদিনার শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন হতে পেরেছিলেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যদি তাঁর স্ত্রীকে সেদিন তালাক দিয়ে দিতেন, তাহলে তাঁর এই সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখতে পেত না। আল্লাহর আয়াতের ওপর ভরসা করার ফলেই তিনি এই বিজ্ঞ সন্তানের পিতা হতে পেরেছিলেন। তাই যখনই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সালেমকে দেখতেন, তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন।’
সংগৃহীত – হাসিব